সংহতি কবিতা উৎসব: অনিবার্য অক্সিজেন
কবিতা উৎসব

সংহতি কবিতা উৎসব: অনিবার্য অক্সিজেন

বাংলা টাউনের জমজমাট কবিতা উৎসব সেরে বহুদিন পর অনেক রাত করে রেডব্রিজে ফিরলাম। আমার হাতে বিলেতে বসবাসকারী কবিদের প্রকাশিত একগুচ্ছ কবিতার বই, সদ্য পাওয়া সংহতি সাহিত্য পুরস্কারের ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ট্রফি, সনদ ও ফুল। প্রতিবেশীরা ঘুমে। নীরবে ঘরের দরোজা খুলতেই সশব্দে খুলে গেল স্মৃতির তোরঙ। আর ন্যাপথলিনের গন্ধে ভরে গেল গ্যান্টস হিল। স্বাধীনতার আগে, তখন কেবলই গদ্য লিখি। কিন্তু খুব কবি হওয়ার ইচ্ছা। বন্ধু বাবলী হক আর আমি তখন বোদলেয়ারে বুঁদ হয়ে থাকি। একদিন কবি নির্মলেন্দু গুণের কাছে একটি কবিতা লিখে দিই তাঁর পরিচিত কোনো সম্পাদককে দিতে। কিন্তু সে কবিতা তাঁর লম্বা পাঞ্জাবির পকেটে রিপ ভ্যানের মতো লম্বা ঘুম দেয়। পৃথিবীর আলো আর দেখে না। দেশ স্বাধীন হয়। গল্পের সঙ্গে নিরন্তর চেষ্টা করে যাই কবিতার। একদিন কাটাকাটির পর হাতে যা অবশিষ্ট থাকে, তা নিয়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রার কাজ শেষ করে দৌড়ে উঠে যাই দৈনিক বাংলার তিনতলায়। সেখানে বসে পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ দেখেন শুভ্রকেশী চিরতরুণ কবি আহসান হাবীব। ঘামজরজর হাতে কবিতাটা দিই। এবার ছাপা হয়। কদিন পর রফিক আজাদের সম্পাদনায় রোববার-এ আরেকটা। তারপর গাজী সাহাবুদ্দিনের সম্পাদনায় সন্ধানীতেও! নিজের কবিতা দেখে আনন্দে হাততালি দিতে ইচ্ছে করে। এমন সময় ১৯৮০ সালে কিংবদন্তির কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর প্রণোদনায় কবি শামসুর রাহমানের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হলো কবি ও সাহিত্যিকদের নিয়ে ‘পদাবলী’ কবিতা সংগঠন। কবিতা সংগঠন করে কি কবি হব? কিন্তু কাব্য আড্ডা ও অনুষ্ঠানের জন্য যা হলো, তা হলো পড়াশোনার জন্য উসকানিটা। আর আমাদের লেখার ওপর চলতে লাগল সমালোচনার নির্দয়া করাতকাটা। এরপর সম্ভবত ১৯৮৫ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ বিলেত থেকে রাজকবি টেড হিউজকে এনে এয়ারকন্ডিশন্ড হলে করলেন ‘এশীয় কবিতা উৎসব’। আমরা পদাবলীর উদ্যোগে টিএসসির উন্মুক্ত সড়কদ্বীপে তার পাল্টা আয়োজন করলাম দেশীয় কবিতা উৎসব। একসময় আমাদেরও সময় এল। আর এদিকে আটজন কবির এপিঠ-ওপিঠ করে চারখানা গ্রন্থের এক সুদৃশ্য মোড়ক হলো। পুরো কাভারে তরুণ ফটোগ্রাফার নাসির আলী মামুনের তোলা সবার পোর্ট্রেট গেল। নাম হলো ভালোবাসার কবিতা। যুগলবন্দী প্রকাশনী তা প্রকাশ করল ১৯৮৩ সালের বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলায়। আধখানা হলেও সেটা ছিল আমার প্রথম বই! তারপর আকাশের আঁচল কত ভিজেছে মেঘে। দুই দশকেরও বেশি দেশের ঘ্রাণ আর প্রাণ থেকে বহু দূরে। এখনো বোদলেয়ারের সেই আশ্চর্য রহস্যময় মেঘদল খুঁজি—বিলেতের আকাশেই। এখনো কবি হতে চাই। আজ সারা দিন সংহতির কবিতাবৃষ্টিতে আমার ঘর আর আঙিনা একাকার হয়ে গেল। নিজ বাসভূমে পরবাসী হয়ে বুঝতে পারিনি কখন এই দেশ তৃতীয় বাংলা হয়ে গেছে। সেই বেলা ১১টায় আমি পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর ফিরলাম রাত সাড়ে ১১টায়।

অদ্ভুত এক ঘোরে আটকে ছিলাম সারা দিন। নানা রঙের বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে সংহতির তৃতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধন করলেন কলামিস্ট লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। এবার বাংলাদেশ থেকে বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছেন কবি মহাদেব সাহা। উদ্বোধনের পর বেলুন উড়ল, শিশুরা গান করল, নানা রকমের কবিতার ব্যানার নিয়ে সবাই ব্রিকলেন ফুঁড়ে র‌্যালি করে এসে ব্রাডি আর্টস সেন্টারে জড়ো হলে শুরু হলো দিনভর আনন্দ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে জনপ্রিয় উপস্থাপক রেজোয়ান মারুফ ও মুনিরা পারভীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করলেন এবারের কবিতা উৎসব। তারপর মিতা তাহের সংহতির শিশুশিল্পীদের নিয়ে যখন একটার পর একটা গান করতে লাগলেন, আমি তখন মুগ্ধ হয়ে শুনলাম তাঁদের বাংলা উচ্চারণ। বোঝার উপায় নেই এঁদের প্রধান ভাষা ইংরেজি। এরপর কয়েকটি পর্বে অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন বিলেত, আমেরিকা, ফ্রান্স, বাংলাদেশ, ভারত থেকে আগত প্রায় ৭০ জন কবি। আবৃত্তি পর্বে আবৃত্তি পরিবেশন করে পুনশ্চ, কণ্ঠপ্রবাস ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন উর্মি মাযহার, সৈয়দ আফসার উদ্দিন, ড. জাকি রেজোয়ানা আনোয়ার প্রমুখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ইভা রহমান, শাহিনূর হিরক, মিতা তাহের প্রমুখ। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও কবিতা পাঠ করেন কবি ও নাট্যকার মাসুদ আহমেদ, কথাসাহিত্যিক সালেহা চৌধুরী। বক্তব্য দেন কবি ও সাংবাদিক মুহিত চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক উর্মি রহমান ও অনুবাদক সাগর চৌধুরী। কবিতা ও কথকতা জমে উঠলে শুরু হলো সম্মাননা ও সংহতি সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার প্রদান। সংহতির আজীবন সম্মাননা পেলেন শ্রদ্ধেয় লেখক সাংবাদিক কাদের মাহমুদ। আর মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হলো সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হিরণ্ময় ভট্টাচার্যকে। কাদের ভাই শুধু কবি নন, সমালোচনা সাহিত্য ও গল্পের জন্যও বিশেষ খ্যাতিমান। হিণ্ময় দাদার রসজ্ঞানসমৃদ্ধ রচনা নিয়ে এটাই বলা যায় যে সাহিত্যে কৌতুক সৃষ্টি করার মতো দুরূহ কাজটি তিনি করেছিলেন। গুণীজন পদক প্রদান করা হলো বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি মহাদেব সাহাকে। মহাদেবদা বললেন, এখানে যেভাবে বাংলাদেশের বাইরে নিজের ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি পৃথিবীর কাছে তুলে ধরা হচ্ছে, তা দেখে তিনি বিস্মিত। গাফ্ফার ভাই বললেন, এই উৎসবকে বলা যায় বাংলা কবিতার ত্রিবেণী সঙ্গম। ঢাকা ও কলকাতার সঙ্গে বিলেতসহ ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের বাংলা কবিতার প্রাণপ্রবাহের মিলন হচ্ছে এখানে—একধরনের মোহনার সৃষ্টি হচ্ছে। কবিতার জন্য সংহতি সাহিত্য পুরস্কার ২০১১ পেলাম আমি! ঘোষণা শুনে সেকি চাঞ্চল্য আমার! শুধু ক্রিস্টাল ট্রফি ও বাঁধানো সম্মাননা নয়, সঙ্গে অর্থও। ভাবা যায়! আপনি ট্রেনে কিংবা টার্কিতে বসে লিখতে পারেন। দহগ্রামে কিংবা ঢাকায় বসেও লিখতে পারেন। সে কবিতা বা গল্প কোথায় বসে লিখছেন, তা দিয়ে আপনি চিহ্নিত হতে পারেন না। কাশবনের কন্যা কিংবা লালসালু লিখতে সামসুদ্দিন আবুল কালাম ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে বাংলাদেশে যেতে হয়নি। বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন, যদি বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেন আর আপনার শিকড় যদি হয় বাংলাদেশে, আপনি বাংলাদেশেরই কবি।

নানা আয়োজন আর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুদিন ব্যাপী সংহতি বাংলা কবিতা উৎসবের সমাপ্তি হলো। গত ৩ ও ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় সংহতি আয়োজিত তৃতীয় বাংলা কবিতা উৎসব। উৎসবে বাংলাদেশ থেকে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কবি মহাদেব সাহা। তাছাড়াও ইউরোপ আমেরিকা ও বাংলাদেশ থেকে অনেক কবিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাহিরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সংহতি-ই সর্বপ্রথম বাংলা কবিতা উৎসবের আয়োজন করে ২০০৮ সালে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারেও অনুষ্ঠিত হয় বাংলা কবিতা উৎসব। স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, কাব্যনৃত্য, কাব্যনাট্য সঙ্গীত ও জারী গানের আয়োজন আর বিপুল সংখ্যক কবি-সাহিত্যিক ও সাহিত্য প্রেমীদের উপস্থিতিতে সমাপ্ত হলো সংহতি সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত ’বাংলা কবিতা উৎসব। ৩ জুলাই রোববার পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নানান রঙের বেলুন ফ্যাস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন লেখক কলামিস্ট আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ও বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি মহাদেব সাহা ও সংহতি’র প্রতিষ্ঠিতা সভাপতি কবি ফারুক আহমদ রনি। উদ্বোধন ঘোষণার পর বিভিন্ন শহর এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে উৎসবে যোগ দেয়া কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হলে সবার মুখে উচ্চারিত হয় কবিতার জয়গান। কবিতায় কবিতায় সাজানো প্ল্যাকার্ড আর ব্যানার হাতে বাংলা টাউনের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে র‌্যালির সমাপ্তি হয় ব্র্যাডি আর্ট সেন্টারে। কবিগুরু রবীন্দ্রাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে জনপ্রিয় উপস্থাপক রেজোয়ান মারুফ ও মুনিরা পারভিনের উপস্থাপনায় বিকেল তিনটা থেকে শুরু হয় উৎসবের মূল পর্ব। বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মিতা তাহের সংহতির শিশু শিল্পীদের নিয়ে পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের গান ’আগুনের পরশমনি’ এবং ‘আলো আমার আলো’ গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে উদীচী’র শিল্পীরা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত বার্ষিকী উপলক্ষে উৎসর্গিত এবারের কবিতা উৎসবে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট কবি মহাদেব সাহা বলেন, বাংলাদেশের বাইরে বাংলা ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে এমন একটি উৎসব দেখে আমি অভিভূত। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে নিজের ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি পৃথিবীর কাছে তুলে ধরতে সংহতির এই আয়োজন সাধুবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। প্রবাসে এতো ব্যস্ততার মধ্যে শুধু কবিতার জন্য একটি দিন, শুধু কবিতার ভালোবাসায় এতো লোকের সমাগম আমাকে মুগ্ধ করেছে। এত সুন্দর আয়োজন, উদ্যোক্তাদের আন্তরিকতা আর বিলেতে কবি-সাহিত্যিক ও সাহিত্য চর্চা দেখে একজন বাংলাভাষী কবি হিসেবে আমি আনন্দিত, আশাবাদী ও গর্বিত। বিলেতে পূর্বে আসার স্মৃতি, বাংলা কবিতা, কবিতা উৎসব এবং এবারের সফরসহ নানান প্রসঙ্গ টেনে বক্তৃতা শেষে কবি পড়ে শুনান নিজের কবিতা । হল ভর্তি উপস্থিতি তখন মগ্ন হয়ে শুনেন তাঁর কবিতা। আমন্ত্রিত কবি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী সংহতির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এ উৎসব কে বলা যায় বাংলা কবিতার ত্রিবেণী সঙ্গম। ঢাকা ও কলকাতার সঙ্গে বিলেতসহ ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের বাংলা কবিতার প্রাণ প্রবাহে এখানে এক ধরনের মোহনার সৃষ্টি হচ্ছে। যার গতি ক্রমশই বেগবান হবে বলে আমি আশাবাদী। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও কবিতা পাঠ করেন কবি ও নাট্যকার মাসুদ আহমেদ, কথা সাহিত্যিক সালেহা চৌধুরী আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ থেকে আগত কবি মুহিত চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক উর্মি রহমান ও সাগর চৌধুরী। কয়েকটি পর্বে বিন্যস্ত অনুষ্ঠানে বিলেত, আমেরিকা, ফ্রান্স, বাংলাদেশ, ভারত হতে আগত কবিদের মধ্যে প্রথম দিনের কবিতা উৎসবে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি কাদের মাহমুদ, মাসুদ আহমেদ, সালেহা চৌধুরী, শামীম আজাদ, ফেরদৌস রহমান, সৈয়দা মঞ্জু মজিদ, মাশুক ইবনে আনিস, সংহতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফারুক আহমেদ রনি, আবু মকসুদ, দেলওয়ার হোসেন মঞ্জু, মিলটন রাহমান, কাজল রশিদ, দিলু নাসের, মঞ্জুরুল আজিম পলাশ, লোকমান আহমদ, ওয়ালি মাহমুদ, অলি রহমান, মঞ্জুলিকা জামালী, শাহনাজ সুলতানা, শাহ শামীম আহমদ, মুজিব ইরম, খাতুনে জান্নাত, আলী আসগর, সৈয়দ রুম্মান, নজরুল ইসলাম নাজ, জামিল সুলতান, সুফিয়া নুরুজ, সাইফ উদ্দিন আহমদ বাবর, সেবুল আহমদ, নজরুল ইসলাম হাবিবী, সাজেদা সৈয়দ, মাহফুজা তালুকদার সহ প্রায় ৭০ কবি স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করেন। আবৃত্তি পর্বে দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে পুনশ্চ:, এবং কণ্ঠপ্রবাস। একক আবৃত্তি করেন, প্রপা, নির্ঝর, তপন, লুৎফুন নাহার বেবি, উর্মি মাযহার, সৈয়দ আফসার উদ্দিন, ড. জাকি রেজোয়ানা আনোয়ার। কাব্যনৃত্য পরিবেশন করেন রিয়ানা তৃনা। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার অংশ বিশেষ নিয়ে কাব্যালেখ্য পরিবেশন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ইভা রহমান, শাহিনূর হিরক, মিতা তাহের এবং নৃত্য পরিবেশন করে সত্যেন সেন স্কুল অব পার্ফর্মিং আটস ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর হাফা ও রাফা এবং শম্পা। সংহতি সাহিত্য পরিষদ প্রতিবারের মত এবারও সাহিত্য চর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য সংহতি পদক এবং গুণীজন পদক প্রদান করেছে। কবিতায় সংহতি সাহিত্য পদক ২০১১ দেয়া হয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি শামীম আজাদকে। আজীবন সম্মাননা পদক প্রদান করা হয় লেখক, সাংবাদিক কাদের মাহমুদ কে। মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হিরণ্ময় ভট্টাচার্যকে। গুণীজন পদক প্রদান করা হয় বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি মহাদেব সাহাকে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এহিয়ার স্বাগত বক্তব্য এবং শামীম শাহানের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় দু’দিন ব্যাপী কবিতা উৎসবের প্রথম দিনের সফল সমাপ্তি হয় সংহতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বুলবুলের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় দিনের কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় টেমস্ নদীতে নৌ-বিহারের মাধ্যমে। বিলেতের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রায় দুই শতাধিক কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের উপস্থিতিতে এক আনন্দ উৎসবে আন্দোলিত হয়ে ওঠে টেমস নদীর উত্তাল জল। কবিতা, গান, গল্প আর আড্ডায় বয়ে নিয়ে এসেছির এক নান্দনিক পরিবেশ। কবিতা পাঠ, আবৃতি আর সঙ্গীতের ফাঁকে ফাঁকে খাবার পরিবেশনার মাধ্যমে গ্রীষ্মের দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে কবিতা উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন।

 

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *