লন্ডনে বাংলা কবিতা উৎসব : শীতের আকাশে তবু কবিতার তুলো ওড়ে
ইস্ট লন্ডনের শহীদ আলতাফ আলী পার্কে সকাল ৯টা থেকে প্রতিদিনের পরিচিত দৃশ্যগুলো যেন নিজেকে বদলে ফেলেছে। স্থানীয় গ্রীষ্মের শেষদিকে কিছুটা শীতের তীব্রতায় প্রাত্যহিক দৃশ্যগুলো যেন চুপটি মেরে আছে আশেপাশের অন্য কোথাও। এক নতুন দৃশ্যের উচ্ছ্বাসে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ছুটির দিনের উৎসুক লন্ডনবাসী যে যার মতো দাঁড়িয়ে পড়েছে আলতাফ আলী পার্কের নতুন দৃশ্যশোভার চারিদিকে। এ দৃশ্য আজ কবিতাপ্রেমীদের কোলাহলে। একে একে কবিতার নামে নানা সস্নোগান অঙ্কিত ব্যানার-ফেস্টুন হাতে ছুটে আসছে কবিতাপাগল অগণিত মুখ। শিশু থেকে বৃদ্ধ কে না ভালোবাসে কবিতা! প্রত্যেকের দৃষ্টি ফুঁড়ে যেন বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন কবিতার সব ধারালো পঙ্ক্তি। সব কিছু ছাপিয়ে এখান থেকেই কবিতার শোভাযাত্রা শুরু করবে ‘বাংলা কবিতা উৎসব ২০১২’। এই র্যালিতে অংশগ্রহণ করতে প্রাত্যহিক সীমাহীন ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে ‘সংহতি সাহিত্য পরিষদ’-এর সদস্যদের আগ্রহ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিল_ দীর্ঘ একবছর বিরতির পর আজ আবার কবিতা উৎসব। দৃষ্টি আকর্ষণীয় তাদের নানা আয়োজন। অবাক বিস্ময়ে তাকানোর মতো আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রতি ‘সংহতি’র আচরণ ও অতিথিদের অংশগ্রহণ। এর সঙ্গে অংশ নিয়েছেন স্থানীয় ও বাংলা সংবাদপত্র-টেলিভিশনের অগণিত মিডিয়াকর্মী ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। কবিতা পড়ার যে পাঠক নেই, কবিতা শোনার যে শ্রোতা নেই_ এই দৃশ্য যেন সেই ঘুণে ধরা ধারণাকে উপহাস করে চলেছে।
সকাল ১০টায় শুরু হলো দিনব্যাপী কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজন সকালবেলার র্যালি। গন্তব্য উৎসবস্থল ব্রাডি আর্ট সেন্টার। র্যালিতে অংশ নিয়েছেন সংহতি সাহিত্য পরিষদের অগণিত সদস্যসহ তাদের ও আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের অভিভাবক কবি ও বিশিষ্ট লেখক-কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বর্তমান বৃটেনের অন্যতম শক্তিমান ও জনপ্রিয় কবি স্টিফেন ওয়াটস, টাওয়ার হ্যামলেটের মেয়র, বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার ছাড়াও আরো স্থানীয় গণ্যমান্য নারী-পুরুষ। আর এসময়ের বাংলা ভাষার শক্তিমান ও জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণসহ বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে যাওয়া আমরা কয়েকজন_ কবি মারুফ রায়হান, আমি ও কানাডা প্রবাসী কবি মাসুদ খানের অংশগ্রহণে এ র্যালি যেন আরো বেশি বেগবান হয়ে ছুটে চলে গন্তব্যের দিকে। র্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি জার্মান প্রবাসী কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী। প্যারিস এবং ইতালি থেকেও এসেছিলেন অনেক কবিতাপ্রেমী।
ইস্ট লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টার আজ কবিতার জন্য নিবেদন করেছে নিজেকে। যেন সে নিজেকে বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছে_ আজ সারাদিন কবিতার দিন। কবিদের বরণ করার জন্যই সে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছে রঙিন সাজে। একদিকে মূল মঞ্চ, একদিনে কবিদের বই বিক্রির মেলা আর একদিকে কবি ও দর্শনার্থীদের জন্য আপ্যায়নের সু ব্যবস্থায় ঘরটির প্রতিটি দৃশ্যই যেন কবিতাময় হয়ে উঠেছে।
অনুষ্ঠান শুরু হলো স্থানীয় সময় সকাল এগারোটায়। ‘তুমি সুন্দর তুমি সত্যের, তুমি সাম্যের / কবিতা তুমি আর এক নাম জীবনের’ কবি ইকবাল হোসেন বুলবুলের কথায় এই সমবেত উদ্বোধনী সঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয় দিনব্যাপী বাংলা কবিতা উৎসবের। তারপর আয়োজক ও অতিথিদের সংক্ষিপ্ত ভাষণ শেষে কবিতা চলচ্চিত্র নাচে গানে জমে ওঠে এই কবিতার দিন। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক কবি শামসুল হক এহিয়া, ট্রেজারার হেলাল উদ্দিন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি ফারুক আহমেদ রনি ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সংহতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আগামী দিনের কবিতা উৎসবকে ঘিরে তাদের স্বপ্নের কথা শোনান। সংহতির অন্যতম স্বজন কবি শামীম আজাদ উৎসব ও সংগঠনের নানা দিক নিয়ে নিজের ভাললাগার কথা জানান।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন অগণিত কবি ও শুভানুধ্যায়ীগণ। বার্মিংহাম থেকে কবি মুজিব ইরম, কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো বিভিন্ন সিটি থেকে দলে দলে কবিতাপ্রেমীরা দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে থাকেন। কয়েকটি পর্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমবেতদের অংশগ্রহণে দর্শক পর্বে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা অবধি দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা কোনো কবিতার প্রোগ্রামে দর্শক ধরে রাখার কাজটি মোটেই সহজ কোনো ব্যাপার নয়। এই দিনে যে কাজটি অনায়াসেই করতে পেরেছে ‘সংহতি’। দর্শক সারিতে সারাদিন এক মুহূর্তের জন্যও কোনো তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অগণিত দর্শককে দেখেছি অডিটোরিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কবিতা শুনতে। ব্রিটিশ জনপ্রিয় কবি স্টিফেন ওয়াটস বাংলাদেশের অধিকার বঞ্চিত নারীদের নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করে অনুষ্ঠানে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করেন। বাংলাদেশ, কানাডা, জার্মানি, প্যারিস ও ইতালি থেকে আমন্ত্রিত অতিথি কবি ও লন্ডন প্রবাসী বাঙালি কবিদের নানা স্বাদের কবিতাপাঠ, ভাষণ-সম্ভাষণে দিনমান যেন এক অনন্য কবিতাময় হয়ে উঠেছিল তৃতীয় বাংলা তথা ইস্ট লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টার। এছাড়াও ছিল নির্বাচিত কবিদের কবিতা থেকে আবৃত্তি। কবিতা আবৃত্তি করে শোনান রেজোয়ান মারুফ, মুনিরা পারভীন ও সালাহউদ্দীন শাহীন। অন্যদের মধ্যে আরো যারা কবিতা পাঠ করেন তারা হলেন_ কাদের মাহমুদ, শামীম আজাদ, মাশুক ইবনে আনিস, মুজিব ইরম, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, মিলটন রহমান, মঞ্জুলিকা জামালী, অলি রহমান, কাজল রশীদ, নিতুপূর্ণা, শামীম শাহান, ওয়ালী মাহমুদ, শাহনাজ সুলতানা, খাতুনে জান্নাত, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, শামসুল হক, আতাউর রহমান মিলাদ, মাজেদ বিশ্বাস, আহমদ ময়েজ, তুহিন চৌধুরী, মতিউর রহমান সাগর প্রমুখ।
এবারের কবিতা উৎসবে সংহতি মরণোত্তর পদকে সম্মানিত করা হয় কবি ও শিশুতোষ লেখক ডা. কুদরত উল ইসলামকে। বাংলা সাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য কবি, কথাশিল্পী ও নাট্যকার ডা. মাসুদ আহমেদকে প্রদান করা হয় আজীবন সম্মাননা পদক। বাংলা কবিতায় অবদানের জন্য কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ও বিলেতে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি ও ছাড়াকার দিলু নাসেরকে সংহতি সাহিত্য পদকে সম্মানিত করা হয়। এছাড়া আমন্ত্রিত কবিদেরকে গুণীজন ও বিশেষ সম্মাননা পদকে ভূষিত করা হয়। কবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রত্যেকের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে এবারের কবিতা উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছিল সদ্য প্রয়াত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে। আবু তাহেরের নির্মাণে হুমায়ূন আহমেদের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত ডকু সিনেমাও প্রদর্শন করা হয়।
আয়োজক সংগঠন ‘সংহতি সাহিত্য পরিষদ’ দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে তাদের নানামাত্রিক সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করলেও এরকম নিরেট কবিতা উৎসবের আয়োজন করছে গত ৫ বছর ধরে। এ উৎসবে ইতোপূর্বে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত কবি বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, আসাদ চৌধুরী, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মুস্তাফিজ শফিসহ আরো অনেকে। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী বাঙালি কবিরা প্রতিবছরই এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তৃতীয় বাংলার এই কবিতা উৎসবকে রাঙিয়ে যাচ্ছেন।
সংহতি শুধু উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি তাদের কর্মকা-। কবিতা ও সাহিত্যকেন্দ্রিক কিছু প্রকাশনা ও জনকল্যাণমুখী কিছু কর্মকা-ও তারা পরিচালনা করে আসছে।
প্রতিবছরই তারা আমন্ত্রিত অতিথিদের যাতায়াত, আবাসন, আপ্যায়ন ব্যয় থেকে শুরু করে তাদেরকে ইংল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলো সাধ্যানুযায়ী পরিদর্শন করিয়ে থাকে। এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। ২৮ আগস্ট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে রাত ৯ টায় যাত্রা শুরু করে আমরা লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে পেঁৗছাই ২৯ আগস্ট ভোর সোয়া ছয়টায়। হিথ্রোতে নেমেই সংগঠনের সদস্যদের কুশলী ও দক্ষ পরিচালনা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি। বিমানবন্দর থেকেই তারা আমাদের দেখভালের যাবতীয় দায়িত্ব বুঝে নেন। ট্রেজারার হেলাল উদ্দিনের তত্ত্ববধানে আমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করেন ৬৫, পোর্টট্রি স্ট্রিট, পপলারের এক চমৎকার ফ্ল্যাটে। কবি নির্মলেন্দু গুণ ও আমার জন্য একটি পরিপাটি কক্ষ এবং কবি মাসুদ খান ও মারুফ রায়হানের জন্য আর এক মনোরম কক্ষে শুরু হয় কবিতার জন্য আমাদের লন্ডনে বসবাস। ফ্ল্যাটে ওঠার পর থেকেই সংহতিকেন্দ্রিক অসংখ্য কবি ও কবিতাপ্রেমী আমাদেরকে উদ্দেশ করে চলে আসেন আমাদের ফ্ল্যাটে, জমিয়ে তোলেন কবিতার আড্ডা। শাহেদ চৌধুরী, তুহিন চৌধুরী দম্পতির আপ্যায়নের ধরনে সত্যিই মনটা বিগলিত হয়ে যায়। কবিতা পাঠ করেন কখনো কবি নির্মলেন্দু গুণ, কখনো মাসুদ খান, কখনো মারুফ রায়হান, কখনো আমি_ আর মুজিব, বুলবুলসহ ওখানকার কবিরা তো আছেনই। এই করতে করতে খুব নিকটে এসে যায় ২ সেপ্টেম্বর সেই কাঙ্ক্ষিত দিন, সারাদিন কবিতার দিন। লন্ডনের বাংলা কবিতা উৎসব ২০১২।
তবে এই কবিতা উৎসবের বাইরে শুধুই কি ফ্ল্যাটে বসে দিনগণনা? কখনো বুলবুল, কখনো এহিয়া, কখনো হেলাল, কখনো তাহের, কখনো সেলিম, কখনো শাহেদ, কখনো শাহান আমাদেরকে তুলে নিয়ে গেছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে। কবি নির্মলেন্দু গুণের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ও আগ্রহে উৎসবের পরদিনই রেজোয়ান মারুফের নেতৃত্বে কবি শাহ আলমের গাড়িতে আমরা দেখে এলাম ক্যানসাল গ্রীনের এক সিমেট্রিতে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমাধি। ৩১ আগস্ট সেলিমউদ্দিন ও তুহিন চৌধুরী আমাদের নিয়ে গেলেন সেই স্বপ্নের টেমস্ নদীর পারে। টেমসের জল এই প্রথম দেখতে পেরে আবেগে ভিজে এল চোখ। দেখলাম টাওয়ার ব্রিজ, লন্ডন টাওয়ারসহ টেমসের চারপাশের নানান স্থপনা। আর ফাঁকে ফাঁকে চলল স্থানীয় টিভি ও সংবাদপত্রগুলোতে আড্ডা ও কবিতাপাঠ।
আবু তাহের আমাদের নিয়ে গেলেন কেন্টের এক ফলের বাগানে। যেখানে নিয়ম করাই আছে_ বিনামূল্যে ইচ্ছা মতো বাগানের ফল খেতে পারার। অপার উৎসাহে মেমে পড়লাম ফ্রুট পিকিংয়ের কাজে। ঢুকেই চোখে পড়ল পেয়ার গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা অচেনা পেয়ার। ছিঁড়ে খেতেই বুঝতে পারলাম কী সুস্বাদু এই ফল। গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলাম, স্ট্রবেরি, রাজবেরি, আপেল, প্লাম্পের মতো নানা জাতের সুমিষ্ট ফল। তাই দুপুরে আর ওই দিনের লাঞ্চ করার উপায় ছিল না।
২ তারিখ উসবের পর থেকেই শুরু হলো আমাদের অন্য আরেক জীবন। কয়েক দিন ঘুরে ঘুরে বন্ধনহীন দেখে নিলাম লন্ডনের কখনো মেঘলা কখনো উজ্জ্বল আর রাতের আলো ঝলমলে দৃশ্যকে। ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকলো বিভিন্ন বাড়িতে নিমন্ত্রণ আর কবিতা পাঠের আড্ডা। ৯ সেপ্টেম্বর আমরা সবাই স্টার্টফোর্ট অন এভন, শেক্সপিয়ারের বাড়িতে যেন শেক্সপিয়ারের নিমন্ত্রণে বেড়াতে এলাম। কী মনোরম এক বাড়িতে বাস করতেন শেক্সপিয়ার! আর তার চারপাশের দৃশ্য আরো কী যে অভাবনীয় সুন্দর! পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এভন নদীটি যেন এই বিখ্যাত কবি-নাট্যকারের মনের মতো করেই সৃষ্টিকর্তা এখানে শায়িত রেখেছেন।
বার্মিংহামের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান কবি মুজিব ইরম, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, চলচ্চিত্র নির্মাতা মকবুল চৌধুরী ও নাট্যকর্মী তারেক চৌধুরী। সুইনডন, অক্সফোর্ড, স্টোনহেঞ্জ, সেইলসবারি, বর্নমথে
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কোনো দিন মন থেকে মুছে যাবার নয়। এসব অভাবনীয় সুন্দর দর্শনীয় জায়গাগুলো আমাদেরকে ঘুরিয়ে দেখান কথাশিল্পী কামাল রাহমান, ডা. রাফি আহমেদ ও বিজু। ক্যামব্রিজ, ব্রিটিশ লাইব্রেরি, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মিলেনিয়াম ডোম, বাকিংহাম প্যালেসের মতো আরো অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখান ইকবাল বুলবুল, এহিয়া, নিতু, কাজল, ওয়ালীসহ একঝাঁক তরুণ কবিতাকর্মী।
একটি বিষয় খুব স্পষ্ট মর্মে গেঁথে গেল যে, এখন আর ইংল্যান্ডের প্রবাসী বাঙালিরা তাদের নিজেদেরকে ‘ডায়াস্পরা’ বা ‘অনাবাসী’ বলতে মোটেই রাজি নন। এ ধারণাকে তারা তাদের পূর্বপুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান। পূর্বপুরুষেরা আজকের এই ভূমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। তাদের বৃটিশবাঙালি সন্তানেরা নিজেদেরকে কখনো ডায়াস্পরা বলে মেনে নেবে না। এখন আর তারা বিক্ষিপ্ত নয়। এখন আর কোনোভাবেই তাদের আলাদা ভাববার অবকাশ নেই। তারা মনে করেন তাদের ভাষা সাহিত্য এখন বৃটিশ মূল ধারারই অংশ। তারা এখন বৃটেনে তাদের অবস্থানকে ‘তৃতীয় বাংলা’ বলে স্বীকার করছে। এই তৃতীয় বাংলাকে তারা বাংলা কবিতার চারণভূমি বলতেও দ্বিধা করছে না। সমগ্র বৃটেনে দীর্ঘকালের বাংলা কবিতা চর্চা এবং দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক কর্মকা- তাদের এ দাবিকে অনেক বেশি যুক্তিপূর্ণ করে তুলেছে।
জীবিকা নির্বাহের সীমাহীন ব্যস্ততা, প্রতিকূল আবহাওয়া ও নাগরিক নির্মমতাকে উপেক্ষা করে ইংল্যান্ডের আকাশে বাতাসে যে কবিতার তুলো উড়তে দেখেছি, তাতে একজন বাংলা কবিতাকর্মী হিসেবে নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবান মনে করেছি। বাংলা কবিতা উৎসবকে ঘিরে দীর্ঘ ২৪ দিনের বিলেত ভ্রমণ শেষে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, ম্যাথু আর্নল্ড, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, জন মিল্টন, স্যামুয়েল কোলরিজ, জন ডান, হ্যারল্ড পিন্টার প্রমুখ মহান কবিদের দেশ থেকে আরো বেশি আশাবাদী হয়ে দেশে ফিরেছি। কবিতার জয় অনিবার্য।